RSS

Category Archives: সুন্দরবন

সুন্দরবনে ১০ বছরে বাঘের আক্রমণে ১৯৬ জনের মৃত্যু

সুন্দরবনে ১০ বছরে বাঘের আক্রমণে ১৯৬ জনের মৃত্যু


সুন্দরবনে গত ১০ বছরে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণে ১৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সুন্দরবনে মারা গেছে ২৬টি বাঘ। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের সংরক্ষিত নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, নিহত লোকজনের বেশির ভাগই বনজীবী, যারা বৈধ পাশ নিয়ে বনজ সম্পদ আহরণে বনে গিয়েছিল। এদিকে ১০ বছরে গ্রামবাসীর হাতে মারা গেছে ১২টি বাঘ।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে জানান, ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় বাঘের আক্রমণে একজন নারীসহ মোট ২৬ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ময়না মণ্ডল নামের মংলার জয়মনি এলাকার একজন গ্রামবাসী ছাড়া সবাই বনজীবী। নিহত লোকজনের মধ্যে ১৪ জনের বাড়ি বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলা উপজেলায়, ছয়জনের মংলা উপজেলায়, একজনের রামপাল উপজেলায়, পাঁচজনের বাড়ি খুলনার দাকোপ ও পাইকগাছা এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায়। একই সময়ে চারটি পৃথক ঘটনায় বাঘের আক্রমণে একজন বনকর্মীসহ নয়জন আহত হয়।

মিহির কুমার দো আরও জানান, একই সময়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে মোট ১২টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা গেছে। এর মধ্যে মংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় চারটি বাঘকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু হয় অন্তত দুটি বাঘের। একটি বাঘ মারা যায় ২০০৭ সালে সিডরের সময়। বাকি বাঘগুলো চোরা শিকারিদের হামলায় মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহিরুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ১০ বছরে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন এলাকায় ১৬৮ জন বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছে। নিহত লোকজনের বেশির ভাগই বনজীবী এবং সুন্দরবনসংলগ্ন নদী-খালে চিংড়ির রেণু আহরণকারী। সর্বশেষ গত শনিবার খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ স্টেশনের মঠবাড়ী এলাকায় আরমান গাজী (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান। তিনি জানান, একই সময়ে ওই এলাকায় মোট ১৪টি বাঘ মারা গেছে। এর মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষের হাতে নিহত হয় আটটি বাঘ।

বনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে অনেক মানুষ মারা গেলেও সুন্দরবন পূর্ব বা পশ্চিম বন বিভাগের কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য না থাকায় কুমিরের আক্রমণে হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায়নি।

সূত্র: প্রথম আলো, ৬ই ডিসেম্বর ২০১০

 

সুন্দরবন হতে পারে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র

সুন্দরবন হতে পারে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র


সুন্দরবনের দৃশ্য নয়নাভিরাম অপরূপ এবং গুরুগম্ভীর। আর এ নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি ২৪ ঘণ্টায় বদলায় কমপক্ষে ৬ বার। সুন্দরবনের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশি-বিদেশি ও বিভিন্ন শ্রেণীর পর্যটকদের সব সময় বিমোহিত করে। বন বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ৮০ হাজার ১০২ জন পর্যটক সুন্দরবনে আসেন। ইকো ট্যুরিজম থেকে বন বিভাগের গত অর্থবছরে আয় হয় ২৬ লাখ ২১ হাজার ৬০ টাকা। পর্যটক সংখ্যা ও এ খাতে আয় আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকার উদ্যোগ নিলে আগামীতে সুন্দরবন হতে পারে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। সুন্দরবনের বিশেষ আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর করমজল পর্যটন কেন্দ্র, চাঁদপাই রেঞ্জে মংলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হারবারিয়া, সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মংলা বন্দর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে কটকা রেস্ট হাউস, সমুদ্র সৈকত সংবলিত কচিখালী, নীলকমল অভয়ারণ্য, মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রসিদ্ধ দুবলার চর, শিবসা নদীর তীরে ৪০০ বছরের পুরনো মন্দির আর ঐতিহাসিক শেখেরবাড়ী নিয়ে শেখেরটেক, মান্দারবাড়িয়া দুর্গম অভয়ারণ্য। এ ছাড়া হিরণ পয়েন্টে বন বিভাগ ও মংলা বন্দরের নিজস্ব পাইলট রেস্ট হাউস ও বাতিঘর দর্শনীয় স্থান।

করমজলঃ মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে সামান্য দূরে পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর বন বিভাগের আকর্ষণীয় এক পর্যটনস্থল করমজল। করমজলকে বন বিভাগ সুন্দরবনের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে আসেন। একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণ এবং সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান করমজল। এখানকার প্রধান প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে হরিণ, কুমির, বানর, কাঠের ট্রেইল, টাওয়ার, নৌকা চালনা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। দেশে প্রাকৃতিকভাবে কুমির প্রজননের একমাত্র কেন্দ্র এখানে অবস্থিত।

হারবাড়িয়াঃ বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত পশুর নদীর তীরে মংলা বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হারবাড়িয়া নামক স্থানটি অবস্থিত। এখানকার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি যে কোনো পর্যটককেই বিমোহিত করে। এ স্থানটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে বন বিভাগ ইতিমধ্যে কাঠের তৈরি ২টি ট্রেইলসহ গোলঘর যার একটি পুকুর সংলগ্ন কাঠের তৈরি পুল ইত্যাদি গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক ও উন্নয়নমূলক আরো কিছু পদড়্গেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

কটকাঃ সুন্দরবনের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত কটকা সুন্দরবনের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য। মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কটকা সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখানে পর্যটকদের জন্য বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস রয়েছে। লঞ্চ থেকে নেমে কাঠের জেটি দিয়ে কিছু দূর হাঁটলেই রেস্ট হাউস। তার সামনে সাগরের বিশাল জলরাশি। অন্য পাশে বনরাজি। পর্যটকদের আকর্ষণ করে সহজেই। কটকার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য খাল। এসব খালে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ খুবই মজাদার। খালগুলোর ২ পাশে রয়েছে বিভিন্ন বন্য প্রাণীর সদা আনাগোনা। কটকার জামতলা পর্যবেড়্গণ টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রাণীর অপূর্ব বিচরণ। কখনো কখনো টাওয়ার থেকে বাঘের দেখা পাওয়া যায়। রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলাফেরায় শিহরিত হন পর্যটকরা।

কচিখালীঃ মংলা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কচিখালী। সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। এ পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির এক ছমছম পরিবেশ যা দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর। এ সৈকতে প্রায়ই বাঘের অনাগোনা দেখা যায়। তাই পর্যটকদের ভ্রমণে বন বিভাগের সশস্ত্র রড়্গীদের সহায়তা নিতে হয়। এখানে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস রয়েছে।

নীলকমলঃ মংলা বন্দর থেকে এটিও প্রায় ১০০ কিলোমিটার দড়্গিণে অবস্থিত। সুন্দরবন দক্ষিণ অভয়ারণ্যের এটি প্রশাসনিক কেন্দ্র। নীলকমলের অন্য নাম হিরণ পয়েন্ট। এ নামেই এটি বেশি পরিচিত। ১৯৯৭ সালে ঘোষিত ৫২২তম বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক এখানেই উন্মোচিত করা হয়। পর্যটকদের জন্য বন বিভাগ ও মংলা বন্দরের পৃথক রেস্ট হাউস এখানে রয়েছে।

দুবলার চরঃ সুন্দরবনের সর্ব দিক্ষড়্গিণে অবস্থিত দুবলার চর একটি দ্বীপ বিশেষ। মৎস্য আহরণ, মৎস্য শিকার ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দুবলার চর বিশেষভাবে পরিচিত। এ জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলেরা এখানে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করেন। প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হিন্দুদের পুণ্যস্নান উপলক্ষে দুবলার চরে রাসমেলা বসে। রাসমেলায় হাজার হাজার দেশি-বিদেশি তীর্থযাত্রী ও পর্যটক দুবলার চরে আসেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এটি অবশ্য একটি ভয়ঙ্কর স্থান।

শেখেরটেকঃ শিবসা নদীর তীরে গহিন বনের ভেতর শেখেরটেক মন্দির। এক সময় এখানে জনপদ ছিল বলে জানা যায়। শেখের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ঘরবাড়ির চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। যদিও এর ইতিহাস বিষয়ে এখনো তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এখানে বেশ সমৃদ্ধ একটি জনপদ এক সময় ছিল। সংস্কারের অভাবে মন্দিরটির ভগ্নদশা। গভীর বনের মাঝে মন্দির ও ভগ্ন স্থাপনা পর্যটকদের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি করে।

মান্দারবাড়িয়াঃ সুন্দরবনের সর্ব দড়্গিণ কোণে সুন্দরবনের পশ্চিম অভয়ারণ্যে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর দুর্গম এ স্থানটি পর্যটনের পাশাপাশি গবেষণার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ঘন বনে অতি ক্ষুদ্রাকার প্রাণী থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, শূকর, কচ্ছপ, কুমির, সাপ, কাঁকড়া প্রভৃতি প্রাণী অবাধে বিচরণ করে। সুন্দরবনে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায় মান্দারবাড়িয়ায়।

প্রতি বছর অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। ফলে রাজস্ব বাবদ সরকারের বেশ আয় হয়। বন বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ৮০ হাজার ১০২ জন পর্যটক সুন্দরবনে আসেন। ইকো ট্যুরিজম থেকে বন বিভাগের গত অর্থবছরে আয় হয় ২৬ লাখ ২১ হাজার ৬০ টাকা। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ৭ জন পর্যটক আসেন এবং আয় হয় ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৬৮ টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ২১৪ জন পর্যটক সুন্দরবন দেখতে আসেন। আয় হয় ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৮ টাকা।

সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা খুব সহজেই ট্রলার, ছোট লঞ্চ বা স্পিডবোটে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন। দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

 

 

 

*********************************