RSS

ক্যান্সারও প্রতিরোধযোগ্য

26 ফেব্রু.

‘ক্যান্সার নেই অ্যান্সার’— এ কথাটির এক সময় খুব চল ছিল। ইদানীং অবশ্য তেমন জোরেশোরে একথা আর বলা হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে, সব ক্ষেত্রে না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর কিন্তু মিলেছে। ক্যান্সারের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ক্যান্সার কেন হচ্ছে এটা এখনও ভালোভাবে জানা যায়নি। এ বিষয়ে নিরন্তর গবেষণা চললেও বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। সুনির্দিষ্টভাবে কারণ জানা গেলে একদিন হয়তো ক্যান্সারের পুরো অ্যানসারই আমাদের আয়ত্তে চলে আসবে।

কী এই ক্যান্সার?
সাধারণভাবে আমরা জানি যে, আমাদের শরীর অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। একটা দালান তৈরিতে যেমন অসংখ্য ইট প্রয়োজন, তেমনি শরীরটাও লক্ষ-কোটি কোষের সমন্বয়ে তৈরি। পার্থক্য এই যে, ইট ও ইটের দালান জড়, শরীর ও এর কোষগুলো জীবিত। জীবন যার আছে তার মৃত্যুও আছে। তাই প্রতিদিন আমাদের শরীরে অনেক কোষ মরে যায়, আর তাদের জায়গা নেয় নতুন নতুন কোষ। নতুন কোষগুলো কিন্তু তৈরি হয় একটি কোষ ভেঙে দুটি এই প্রক্রিয়ায়। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া শরীরে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটে যাচ্ছে। যার ফলে যেখানে যখন যেমন ধরনের কোষ প্রয়োজন তাই তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন লক্ষ-কোটি কোষ বিভাজনের সময় নিয়ম মেনে শুধু সুস্থ স্বাভাবিক কোষ তৈরি হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। কোটি কোটি বার একই কাজ করতে গেলে ভুলের সম্ভাবনা সামান্য হলেও থাকে এবং কোষ বিভাজনের সময়ও সেটা ঘটতে পারে। এভাবেই আমাদের শরীরে কখনও কখনও অস্বাভাবিক বা অপ্রয়োজনীয় কোষের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু শরীরে রয়েছে অস্বাভাবিক কোষ শনাক্ত করে তাকে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা, যা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারই অংশ। কোনো কারণে কোনো অস্বাভাবিক কোষ যদি শনাক্ত না হয় বা নষ্ট না হয়ে বেঁচে যায় তাহলে তা এক নতুন ধারার কোষের জন্ম দেয়, যা স্বাভাবিক নিয়ম না মেনে বিভাজন প্রক্রিয়ায় শুধু বাড়তেই থাকে। এ কোষগুলোর বেঁচে থাকা বা মৃত্যু অথবা বিভাজন সব কিছুই অনিয়ন্ত্রিত। স্বাভাবিক নিয়ম এখানে কাজ করে না, আর এভাবেই অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি ক্যান্সারের জন্ম দেয়।প্রতিরোধ গড়ে তুললে প্রতিকার সম্ভব
এই প্রক্রিয়ার ফলে যে কোনো সময় আমরা যে কেউ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকছি। তারপরও আমরা অনেকেই সুস্থ থাকছি কিন্তু কেউ কেউ থাকছি না। সঠিক কারণ জানা না থাকলেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এমন কিছু অবস্থার কথা আমরা জানি। যেমন আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা, আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার, বিয়ে ও বাচ্চা নেয়ার সঠিক বয়স, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো, শিল্প-কলকারখানা এবং পরিবেশগত কিছু কারণ, অন্যান্য কিছু রোগ, ভাইরাস, জীবাণু এগুলোর সঙ্গে অনেক ক্যান্সারের খুবই সম্পর্ক রয়েছে। আবার কিছু ক্যান্সার আছে যা বংশগত, জন্মগত কারণে হয়ে থাকে। বাকি ক্যান্সারগুলো কীভাবে হচ্ছে তার হদিস করা সম্ভব হয়নি। যেসব ঝুঁকিগুলোর কথা আমরা বললাম সেগুলো থেকে দূরে থাকতে পারলে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে। অর্থাত্ এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার সম্পূূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার সরাসরি প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রতিকার করা সম্ভব।

যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়
এ ক্ষেত্রে যা দরকার তা হলো নিজের শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। নিজেকে নিজে যদি আমরা নিয়মিত, এই ধরুন মাসে একবার পরীক্ষা করি তাহলে যে কোনো অস্বাভাবিকতা ছোট অবস্থায়ই চোখে বা হাতে ধরা পড়বে। শরীরের বাইরের অংশগুলো, যেমন ত্বক, হাত-পা, স্তন, মুখের ভেতর—এগুলো জায়গা নিজেরাই খেয়াল রাখা যায়। অস্বাভাবিকতা বলতে আকার আকৃতি বা রংয়ের পরিবর্তন, কোনো ক্ষত বা ঘা, কোনো পিণ্ড বা চাকা ইত্যাদি বোঝায়। এছাড়াও যে কোনো ধরনের শারীরিক কষ্ট বা লক্ষণ যদি দু’সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে সেটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এভাবে সচেতন থাকলে সাধারণ সব লক্ষণের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্যান্সারও শুরুতেই ধরে ফেলা সম্ভব। ‘শুরুতেই পড়লে ধরা, ক্যান্সার রোগ যায় যে সারা’ বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির স্লোগানটি সত্য বলে প্রমাণিত হবে। অর্থাত্ রোগের শুরুতে সঠিক চিকিত্সা করে ভালো হয়ে যাবার সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। ক্যান্সার কী ধরনের রোগ, কী কী কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধে কী করণীয়, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে আমাদের কী ভূমিকা, সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চিকিত্সক বা চিকিত্সা কর্মীদের কী ভুমিকা ইত্যাদি বিষয়কে একটি নিদিষ্ট নিয়মে নিয়ে আসা এবং সেই লক্ষ্যে যার যার অবস্থানে থেকে কাজ করে যাওয়া, আর এভাবেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।
আসুন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করি
ক্যান্সার চিকিত্সা জটিল ও ব্যয়বহুল, যা বিলম্ব হলে তেমন কার্যকরী হয় না। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশের জন্য তাই লক্ষ্য হবে প্রতিকার নয়, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবছর ‘বিশ্ব ক্যান্সার দিবস’ পালিত হয়। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনস্ট ক্যান্সার (ইউআইসিসি)-র প্রতিনিধি বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে আসুন আমরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়ার অঙ্গীকার করি এবং বিশ্বাস করতে শুরু করি যে, ‘ক্যান্সারও প্রতিরোধযোগ্য’।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান